শবে বরাত কবে - শবেব রাতের নামাজ কত রাকাত - শবে বরাত ২০২৬
মুসলিম ধর্মের মানুষদের অত্যান্ত কাঙ্ক্ষিত দিন শবে বরাত দিন। এই পোস্টে আমরা জানবো শবে বরাত কবে, শবেবরাতের নামাজ কত রাকাত, শবে বরাতের ইতিহাস সম্পর্কে। তাহলে চলুন দেরি না করে শবে বরাত কবে শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রতিবছরই শবে বরাত মুসলিম ধর্ম দের উপরে আসে। এই শবেবরাত সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই জরুরি, শবেবরাত হল ১৪ ও ১৫ সাবান মধ্যবিত্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান বা মুক্তির রাত নামে পরিচিত।
পেজ সূচিপত্রঃ শবে বরাত কবে - শবেবরাতের নামাজ কত রাকাত - শবে বরাত ২০২৫
- শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত
- শবে বরাত কি
- শবে বরাতের নামাজের নিয়ম
- শবে বরাত সম্পর্কিত হাদিস
- শবে বরাত কিভাবে উদযাপন করব
- শবে বরাতের দোয়া
- শবে বরাতের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়
- শবে বরাতের ফজিলত
- শবে বরাতের বাংলাদেশের ছুটির দিন
- শেষ কথা
শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত
শবে বরাত কি
শবে বরাত কি এইটা আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, চলুন জেনে নেওয়া যাক। শবে বরাত ফার্সি শব্দ, যার অর্থ মুক্তির রাত। এটি হিজরী শাসন মাসের ১৪ তারিখে দিবে গত রাতে পালিত হয় এবং এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন বলে বিশ্বাস করা হয়। এই মহীমান্ত্রী রাতে মুসলমানরা নফল ইবাদত, নফল নামাজ ও রোজা পালন করে থাকেন।
শবে বরাত মানে মুক্তির রাত এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করে দেন জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আল্লাহ ক্ষমা, ও রিজিক হাদিস অনুযায়ী এই রাতে আল্লাহ দুনিয়ার য় আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন রিজিক ও বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আহান করেন। এই রাতে রোজা রাখা সুন্নত, শাবান মাসে ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে রোজা রাখা সুন্নত। এই রাতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম
আমরা সবাই শবে বরাতের নামাজের আদায় করে থাকি কিন্তু এর সঠিক নিয়ম সম্পর্কে কেউ জানিনা তাহলে চলুন শবে বরাতের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। শবেবরাতে সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন নামাজের নিয়ম নেই, তবে এটি একটি নফল ইবাদতের রাত, যেখানে দুই রাকাত করে যত খুশি নফল নামাজ আদায় করা যায়। এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত, জিকির, দোয়া ও তওবার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়।
মাগরিবের পর দুই রাকাত এবং তাহাজ্জুদের কর বিতর নামাজ আদায়ের প্রচারণ আছে। শবে বরাত নামাজের নিয়ম হল শবেবরাতে নফল নামাজ পড়া হয়, যার কোন নির্দিষ্ট রাকাতের সংখ্যা নেই। আপনি দুই রাকাত করে যত খুশি ততই পড়তে পারেন। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য কোন সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। কিছু বলার নির্দিষ্ট কিছু সূরা পড়া কথা উল্লেখ্য থাকলেও এগুলো মনগড়া হতে পারে। শবে বরাতের রাতে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত, কারণ এই রাতের গুরুত্ব অপরিসীম।
জিকির ও দোয়া আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস অনুসারে এই রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত নাযিল করেন এবং ক্ষমা করে দেন। এই রাতে ইবাদতের মাধ্যমে পাপ মোচন করার সুযোগ থাকে। শবেবরাতে নামাজ বা অন্য কোন ইবাদতের জন্য কোন বাড়তি বা নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। অন্যান্য নফল নামাজের মতই এই রাতেও ইবাদত করা যেতে পারে। কুরআন ও হাদিস নির্ভরযোগ্য আলেমদের পরামর্শ অনুসরণ করে ইবাদত করা।
শবে বরাত সম্পর্কিত হাদিস
শবে বরাত সম্পর্কিত হাদিস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাদিসটি হলো মুয়াজ বিন জাবান (রা.) থেকে বর্ণিত, যেখানে বলা হয়েছে আল্লাহতালা মধ্য সাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। তবে শবে বরাত উদযাপনের নির্দিষ্ট ইবাদত বা উৎসব আয়োজনে বিষয় কোন সহিহ হাদিস নেই, যা ইবনে তাইমিয়া এবং বিন বাজ (রহ.) এর মত আলেমগণ উল্লেখ্য করেছেন।
তাই এই রাতে পটকা ফুটানো আতশবাজি করা বা বিশেষ খাবারের আয়োজন করা বিদআত হিসেবে
গণ্য হতে পারে। ক্ষমা লাভ আল্লাহ তায়ালা এই রাতে মুশরিক, হিংসুক এবং বিদ্বেষী
ব্যাক্তি ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দিন। এই রাতে বান্দাদের গুনাহ মাফ করা হয়
এবং অসংখ্য বান্দা ক্ষমা ও কল্যাণ লাভ করেন। গরিব অসহায়দের সাহায্য করার জন্য
যাকাত ও দান সদকা করা উচত।
শবে বরাত উপলক্ষে পটকা ফোটানো আতশবাজি করার বা বিশেষ কোন উৎসবের আয়োজন করা থেকে বিরত থাকা উচিত কারণ এ ধরনের কাজ ইসলামের মূল আদর্শের পরিপ্রস্তি। ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (রাহ.) এর মতে এই রাতে নির্দিষ্ট কোন ইবাদত করা বা এটিকে উৎসবের মতো পালন করা বিদআত।
শবে বরাত কিভাবে উদযাপন করব
এখন আমরা জানবো শবে বরাত কিভাবে উদযাপন করব, শবে বরাত উদযাপনের সঠিক পদ্ধতি হলো
নফল ইবাদত করা,যেমনঃ কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, দোয়া জিকির ও ইস্তেগফার করা
এবং এর পরদিন রোজা রাখা। আতশবাজি হালুয়া রুটি বিতরণ বা বিশেষ পদ্ধতিতে নামাজ
আদায়ের মতো প্রচলিত কথাগুলো বিদআত ও মনোগড়া তাই এগুলো থেকে বিরত থাকা উচিত। এ
রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করা এবং হিংসা-বিদেশ থেকে নিজেকে
মুক্ত রাখা আবশ্যক।
শবেবরাতে অন্য নফল নামাজের মতই দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করুন। কোন নির্দিষ্ট সূরা নির্দিষ্ট সংখ্যক বার পড়ার নিয়ম নেই মন যা চায় তাই দিয়ে নামাজ পড়তে পারেন। বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা এই রাতে গুরুত্বপূর্ণ আমল। দোয়া ও ইস্তেগফার পাঠ করতে হবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা রহমত সুস্থতা ও হেদায়েতের জন্য দোয়া করুন, যেমন এই দোয়াটি পড়তে পারেন, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাআফু আনি, এর অর্থ হে আল্লাহ আপনি দয়ালু আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে মোবাইল দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম
শবেবরাতের পরের দিন অর্থাৎ সাবান মাসে ১৫ তারিখ রোজা রাখতে পারেন। জিকির দরুদ
শরীফ পাঠ এবং কবর জিয়ারতের মাধ্যমে মৃতদের জন্য সব রেহমান করা যেতে পারে। শবে
বরাতের জন্য ২১ রাকাত বা অন্য কোন বিশেষ পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করার কোন সহিহ
হাদিস নেই, এগুলো মনগড়া, বিদআত।
শবে বরাতের রাতে নামাজ পড়া বা বিশেষ পদ্ধতিতে গোসল করা কেউ শবে বরাত উদযাপনে অংশ মনে করা ঠিক নয়, এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। শবে বরাত কোন আনন্দ উৎসবের সময় নয় বরং এটি একটি মহিমাান্তিক রাত যেখানে আল্লাহর বিশেষ ক্ষমা লাভ করা যায়। এই রাতে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমপর্ণ করুন এবং সব ধরনের শিরক হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন।
শবে বরাতের দোয়া
শবে বরাতের দোয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোয়াটি গুলোর মধ্যে একটি হলো, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাআফু আনি, অর্থ হে আল্লাহ আপনি দয়ালু আপনি ক্ষমাশীল আপনি ক্ষমা করতে ভালবাসেন করেন সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন। এই রাতে আল্লাহর কাছে রহমত মাগফিরাত সুস্থতা ও হেদায়েত কামনা করা উচিত। এছাড়াও শবেবরাত রাতে নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও জিকির করা উত্তম তবে এগুলোর জন্য কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই।
শবে বরাতের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়
এখন আমরা জানবো শবে বরাতের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়, শবেবরাতে নামাজের জন্য কোন নির্দিষ্ট সূরা নেই আপনি সূরা ফাতিহার পর কুরআন তেলাওয়াত থেকে যে কোন সূরা পড়তে পারেন, কারণ এই রাতে পড়া নামাজ অন্যান্য নফল নামাজেরই মত। কিউ কিউ সূরা ইয়াসিন বা সুরা ইখলাস পড়ার কথা বললেও এসবের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম বা হাদিস শরীফে কোন কিছু লেখা নেই এগুলো মনগড়া।
শবে বরাতের ফজিলত
আমার আর অনেকেই শবে বরাত পালন করে থাকি কিন্তু শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে আমরা জানিনা, শবে বরাত বা মধ্য সাবানের রাতে ফজিলত হলো আল্লাহ তা'আলা এ রাতে বান্দাদের বিশেষ ক্ষমা করেন, কোনা মাফ করেন এবং জাহান্নাম থেকে। মুক্তি এই রাতে অসংখ্য বান্দা আল্লাহর কাছে ক্ষমা, প্রার্থনা ও কল্যাণ লাভ করেন। এই রাতে ইবাদত করার জন্য রাসূল (সা.) উৎসাহিত করেছেন এবং দিনের রোজা রাখা নির্দেশ দিয়েছেন।
শবে বরাত হলো নফল ইবাদত এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা উচিত। শাবান মাসে ১৫ তারিখে রোজা রাখা সুন্নত। রাতে কুরআন তিলাওয়াত তাসবিহ পাঠ করা আল্লাহকে স্মরণ করা উচত।
শবে বরাতের বাংলাদেশের ছুটির দিন
শবে বরাতের বাংলাদেশের ছুটির দিন সম্পর্কে জানব। বাংলাদেশের শবে বরাত শাবান মাসের ১৪ তারিখে দিবে গত রাতে পালিত হয়। এর পরের দিন সরকারি ছুটি থাকে যা সাধারণত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়।
২০২৫ ছাদে বাংলাদেশের শবেবরাত ১৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হবে। সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী শবে বরাত ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, শনিবার একদিনের নিয়ে ছুটি থাকবে।
শেষ কথাঃ শবে বরাত কবে - শবেবরাতের নামাজ কত রাকাত - শবে বরাত ২০২৫
শবে বরাত সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানলাম শবেবরাতে নামাজ কত রাকাত, শবে বরাত কি, শবেবরাতে নামাজের নিয়ম, শবেবরাত সম্পর্কিত হাদিস, শবেবরাত কিভাবে উদযাপন করব, শবেবরাতের দোয়া, শবেবরাতে নামাজ ও কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়, শবে বরাতের ফজিলত, শবে বরাতের বাংলাদেশের ছুটি কবে।
আরো পড়ুনঃ আনারস খাওয়ার ১০টি উপকারিতা - আনারস খাওয়ার ৫টি অপকারিতা
এতক্ষণ ধরে শবে বরাত কবে - শবেবরাতের নামাজ কত রাকাত - শবে বরাত ২০২৫ এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনার যদি শবে বরাত কবে - শবেবরাতের নামাজ কত রাকাত - শবে বরাত ২০২৫ এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে গোষ্ঠী শেয়ার করুন যাতে আপনার বন্ধুরাও এ পোস্টটি করে উপকৃত হতে পারে। পরবর্তী পোস্টটি করার জন্য আপনাকে স্বাগতম। আসসালামু আলাইকুম।
নয়ন২৪ এ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url